My Blog

The following post has been published in www.tarunyo.com website.

১৩ই ডিসেম্বর ১৯৯৮




দেখতে দেখতে ১৯ বছর হয়ে গেলো আজ! ১৯ বছর আগের এই দিনটিতে (১৩ই ডিসেম্বর ১৯৯৮) ভয়ংকরতম সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো আমাদের এমজিআর কলেজের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের। এটি ভারতের তামিল নাডু রাজ্যে অবস্থিত একটি কলেজ, যেখানে সেসময় শতাধিক বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করতো। দুই প্রাইভেট কারে আমরা ১২-১৪ জন ক্লাসমেট যাচ্ছিলাম আমাদের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট মঞ্জুনাথের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। মহাসড়কে প্রচণ্ড গতিতে চলার সময় আমাদের একটি গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এক লরির। অল্পের জন্য আমাদের গাড়িটি বেঁচে যায়। দুর্ঘটনায় কবলিত গাড়িটির ড্রাইভার মারা যায়। গুরুতরভাবে আহত হয় আমাদের ৭ ক্লাসমেট, যাদের ৬ জনই বাংলাদেশী। নাদিমের থ্যাতলানো মাথায় এক চোখের জায়গায় ছিলো শুধু থকথকে রক্ত। আমিনুল ও আনিসের মাথার চুল-চামড়া সরে গিয়ে মাথার খুলি দেখা যাচ্ছিলো। আমিনুলের এক পা পুরো উলটো দিকে ঘুরে গেছিলো। শাহাদাতের তিন হাত-পা জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে অদ্ভুতভাবে বেঁকে ছিলো। মাহমুদের সারা মুখে, দেহে কাঁচের টুকরো গাঁথা। খালেদের করোটি ভেঙ্গে কপালের এক অংশ ভিতরের দিকে দেবে গেছিলো অনেকটা। তাদের কয়েকজন কোমায় ছিলো দিনের পর দিন। ডাক্তাররা তাদের অনেকেরই জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু বাঙ্গালোরের দুই হাসপাতালে যমে-ডাক্তারে টানাটানির পর একে একে সবাই মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসে। যদিও দু'জন মাসাধিক-কাল মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলো। অনেকেরই পুরো সুস্থ হতে বছরের পর বছর লেগেছে। এর প্রভাব পড়েছে পড়ালেখায়, এছাড়াও শারীরিক ও অর্থনৈতিক ধাক্কা তো আছেই।

এরকম বড় এক দুর্ঘটনার ভীতিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাবতে গেলে এখনও বুকের ভিতর কাঁপন শুরু হয়। দুর্ঘটনার পরের ৫-৬ মাস কিভাবে পার হয়েছে আমাদের সবার, তা ভাবতে গেলেও হাত-পা জমে যায় এখনও। তবে এমন ভয়ংকর দুর্ঘটনার মধ্যেও আমাদের মনুষ্যত্বের ভালো কিছু দিক বের হয়ে এসেছে। আমাদের কলেজের বাংলাদেশীদের মধ্যে ছিলো নানা রকম গ্রুপ ও ভেদাভেদ। (একই দেশের উঠতি বয়সী শতাধিক ছাত্র এক কলেজে থাকলে এটা অস্বাভাবিক না মোটেই।) কিন্তু এই এক দুর্ঘটনায় দেখা গেলো দলাদলি ভুলে সবাই এক হয়ে গেছে! প্রবাসী ছাত্র সবাই। কারও কোনো অভিভাবক নেই সেখানে। দেখা গেলো অন্যান্য বাংলাদেশী ছাত্ররা নিজেরা মিলেই দলে দলে পালাক্রমে রোগীর দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে লাগলো হাসপাতালে। যার পকেটে যতো টাকা ছিলো, এনে ঢেলে দিলো চিকিৎসায়। আমরা বাঙ্গালী যে এক হলে অসাধ্য সাধন করতে পারি, সে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিলো তখনই। আজ ১৯ বছর পরের এই দিনে এসে কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি আমাদের এমজিআর কলেজের সেসময়ের সব বাংলাদেশী ছাত্র ও বন্ধুদের। আর সবার ভীড়ে যার কথা সবচেয়ে মনে পড়ছে, যেই আলম আমাদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাটাখাটনি ও দৌড়াদৌড়ি করেছে দুর্ঘটনায় আহত বন্ধুদের সেবায়, পরম সৃষ্টিকর্তা তার বিদেহী আত্মাকে চিরশান্তিতে রাখুক।


৩টি মন্তব্য


১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দুঃখবহ ঘটনা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
হ্যাঁ। সময়টা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোই ছিলো।
২২ ডিসেম্বর ২০১৭
মর্মান্তিক ঘটনা।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সেটাই!
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭
আমীন।।
২১ ডিসেম্বর ২০১৭
ধন্যবাদ
মন্তব্য করুন